Bd বাংলাদেশ

হাসিনাকে খুশি করতে ঝটিকা মিছিল,আনা হচ্ছে লোক ভাড়া করে

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:

জুলাই বিপ্লবের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে চলছে ঝটিকা মিছিল। ভোর বেলা কিংবা ফাঁকা সড়কে ১৫-২০ জন তরুণ হঠাৎ রাস্তায় নেমে স্লোগানে মুখর করে। কেউ ফেসবুকে লাইভ দেয়, কেউ আবার ব্যানার ধরে সামনে এগোয় তারপর বড় ধরনের শব্দ হলেই সবাই দৌড়! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, এ কার্যক্রম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় এটি নাশকতারই অংশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এক থেকে দেড় মিনিট স্থায়ী হচ্ছে একেকটি ঝটিকা মিছিল। পথচারী বেশে থাকা কয়েকজন মিছিলে যোগ দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। হঠাৎ একজন ব্যানার ধরছেন। এ মিছিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ফেসবুক লাইভ। কেউ সেটা করতেই ব্যস্ত। এর মধ্যেই বড় ধরনের কোনো শব্দ শুনলেই মুহূর্তে পগারপার।

কখনোবা সেখানেই পড়ে থাকছে ব্যানার। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এমন ঝটিকা মিছিলের চিত্র এখন মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। এ মিছিল থেকে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও আবার বাস লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে তারা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে।

মূলত হাসিনাকে খুশি করতেই এমন ঝটিকা মিছিল করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ সূত্র জানায়, এসব মিছিলে ঢাকার বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে আনা হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীদের গোপনে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, মিছিলে থাকলে পাঁচ হাজার এবং সামনে ব্যানার ধরলে আট হাজার টাকা। বেকার যুবকরাই এসব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, যারা মিছিলে অংশ নিচ্ছে তারা অধিকাংশই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী। পুলিশের নজরদারি এড়াতে মূলত এই ঝটিকা মিছিল করছে দলটির নেতাকর্মীরা।

পুলিশ আরো বলছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা বেড়েছে। এ ধরনের মিছিলের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত এক মাসে শুধু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রায় ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করছে। যেসব স্থানে মিছিল বের হচ্ছে সেসব স্থানে সিসিটিভি ও সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে বিজয় সরণি, মতিঝিল, পান্থপথ, উত্তরা, বাংলামোটর, শান্তিনগর ও উত্তরা এ সাতটি এলাকায় ঝটিকা মিছিল বেশি হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিজয় সরণি এলাকায় দৌড়ে ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে পথচারী বেশে কিছু লোকজন দাঁড়িয়েছিল। পরে তারা ‘শেখ হাসিনা আসবে, রাজপথ হাসবে’ এমন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। দুই মিনিটের মধ্যে মিছিল শেষ করে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় পথচারীরা মিছিলকারীদের কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাদের একজন জানায়, মাদারীপুর থেকে তাকে ভাড়া করে আনা হয়েছে। এ বাবদ সে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছে।

কয়েকদিন আগে খিলক্ষেত এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভোরে আটজন মিলে এক মিনিট স্থায়ী মিছিল করে আগে থেকে দাঁড় করানো মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে বাংলামোটরে মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় এক ব্যক্তি তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া পান্থপথে ঝটিকা মিছিল শুরু হলে একজন সাধারণ শ্রমিক লাঠি নিয়ে তাদের তাড়া করে। গত ২৩ অক্টোবর মতিঝিলে দলটির ঝটিকা মিছিলে ফুটপাত ও চা দোকানিরা ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সূত্র জানায়, ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে মুখে মাস্ক ব্যবহার করছে। এতে তাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে পুলিশের দাবি, প্রযুক্তির সহযোগিতায় এবং গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মিছিলে অংশ নেওয়া লোকজনকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ঝটিকা মিছিলে আমাদের নজরদারি থাকছে। এসব মিছিলে অর্থ লেনদেন হয়। কে অর্থায়ন করছে এবং কার মাধ্যমে অর্থ আসছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মত, এ ধরনের ঝটিকা মিছিল একটি আইনবহির্ভূত কাজ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সম্ভাব্য হামলার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন।

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক জানান, ঝটিকা মিছিল করা যারা করছে, তারা অশুভ শক্তি। মূলত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা এ কাজ করছে। এ ধরনের মিছিল থেকে হামলা, হত্যার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

 

বার্তা বাজার/এস এইচ

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু

Source: bartabazar.com

Leave a Reply

Back to top button