Bd বাংলাদেশ

কক্সবাজার–২: বিএনপির ভেতরেই বিরোধ,শক্ত অবস্থানে জামায়াত

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:

কক্সবাজার–২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক সমীকরণ পুরোপুরি বদলে গেছে। একসময় জোটসঙ্গী ছিল বিএনপি ও জামায়াত; এবারের নির্বাচনে তারা সরাসরি মুখোমুখি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী নেই বলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

প্রথম দফায় বিএনপি কোনো প্রার্থী ঘোষণা না করলেও দ্বিতীয় দফায় এই আসনে দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দলের ভেতর থেকে শক্ত একটি গ্রুপ এখনও অনমনীয় অবস্থানে রয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য এটিএম নুরুল বশর ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্করের অনুসারীরা তাকে সমর্থন না দিলে বিএনপি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অপরদিকে জামায়াত ইসলামী শুরু থেকেই একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদকে মাঠে রেখেছে। গত ছয় মাস ধরে তিনি নিয়মিত গণসংযোগ, সামাজিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে করে মাঠপর্যায়ে তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে মনে করছেন দ্বীপ এলাকার ভোটারদের বড় অংশ।

এই আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা জিয়াউল হক এবং গণ অধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট এস এম রোকনুজ্জামানও প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে মূল ভোটের সমীকরণে তারা কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ নাটকীয়। বিভিন্ন সময়ে বড় ব্যবধানের বিজয় দেখেছে এ এলাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ পেয়েছিলেন ১,০৪,২৭১ ভোট, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রফেসর আনসারুল করিম পেয়েছিলেন ৮৬,৯৪৪ ভোট। অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার ৩২৭ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আযাদ। অন্যদিকে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ পেয়েছিলেন ১,০৩,৫০৩ ভোট এবং আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৪৯,১৯০ ভোট। সেবার ব্যবধান দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৩১৩ ভোটে—যা এ আসনে ব্যাপক ভোট–ব্যবধানের এক সাক্ষ্য।

১৯৯৬ সালের জুন নির্বাচনে বিএনপির ফরিদ পেয়েছিলেন ৪৪,৪৪৫ ভোট এবং আওয়ামী লীগের সিরাজুল মোস্তফা পেয়েছিলেন ৩২,৪৪৩ ভোট। সে অনুযায়ী ব্যবধান ছিল ১২ হাজার ২ ভোট। ১৯৯১ সালে বাকশালের মোহাম্মদ ইসহাক পেয়েছিলেন ২৫,৭২৭ ভোট এবং জামায়াতের শফি উল্লাহ পেয়েছিলেন ২৩,৩৪৫ ভোট। ওই নির্বাচনে ব্যবধান ছিল মাত্র ২ হাজার ৩৮২ ভোট—যা এ আসনের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফল হিসেবে বিবেচিত।

সদ্য প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী কক্সবাজার–২ আসনে মোট ভোটার ৩,৭৩,১০৮ জন। এর মধ্যে মহেশখালীর ভোটার ২,৬৯,৭২৭ জন এবং কুতুবদিয়ায় ভোটার ১,০৩,৩৮১ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩,৪৮,১২৭ জন। ফলে এবারে ২৪ হাজার ৯৮১ ভোট বেড়েছে।

এ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১১৮টি। এর মধ্যে মহেশখালীতে ৮১টি ও কুতুবদিয়ায় ৩৭টি। বুথ সংখ্যা রয়েছে ৭১৯টি। একইদিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে বুথ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে এ আসনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালী বন্দর থানা এবং ধলঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের মতো জাতীয় প্রকল্প এ এলাকায় হওয়ায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি রয়েছে দ্বীপ দুটি ঘিরে।

স্থানীয় রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ অব্যাহত থাকলে ভোটের মাঠে বড় সুবিধায় থাকতে পারেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ। বিপরীতে বিএনপির গ্রুপিং নিরসন হলে পূর্বের ভোটের ইতিহাসের মতোই শক্ত অবস্থান ফিরে পাওয়ার সুযোগও রয়েছে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদের। এখন দেখার বিষয় শেষ সময় পর্যন্ত কোন পক্ষ সমীকরণ ঠিকভাবে ধরে রাখতে পারে।

এই সংসদীয় আসনটি বৃহত্তর মহেশখালী ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিলো। আবার কুতুবদিয়া উপজেলা সংযুক্ত ছিলো চকরিয়া উপজেলার সাথে। ১৯৮৪ সালে অন্যান্য আসনের সাথে কক্সবাজার-২ আসনটি পূনর্বিন্যাস করে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়। তখন থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি হতে জহিরুল ইসলাম, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকশাল হতে মোহাম্মদ ইসহাক বিএ, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হতে এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হতে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হতে দ্বিতীয় বার আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ইসলামী হতে এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচন ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর পর তিন বার আওয়ামী লীগ হতে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি নির্বাচিত হন।

 

বার্তা বাজার/এস এইচ

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু

Source: bartabazar.com

Leave a Reply

Back to top button