প্রবাসী আয় বাড়াতে করণীয় ও অর্থনীতিতে গুরুত্ব

ডেস্ক রিপোর্ট: উন্নয়নশীল শে হিসেবে বাংলােেশর অর্থনীতিতে ওয়েজার্নাস রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, নিরাপদ আশ্রয়, উন্নত জীবনের প্রত্যাশা কিংবা নব আবিষ্কারের নেশা সহ প্রভৃতি কারণে সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে বেড়াচ্ছে। বস্তুত সকল অনুন্নত, উন্নয়নশীল (বাংলাশেসহ) দেশের মানুষ উন্নত শে হতে তাদের উপার্জিত প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ (রেমিট্যান্স) নিজ নিজ দেশে প্রেরণ করে। আর এই ওয়েজার্নাস রেমিট্যান্স এসব দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলােেশর মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈিেশক ম্রুা উপার্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলােেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎসগুলির মধ্যে প্রধান ২টি উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয়। বর্তমানে বাংলােেশ বৈিেশক ম্রুার তীব্র সংকট রয়েছে যা মোকাবেলায় বেশি বেশি বৈিেশক ম্রুা আয় অত্যাবশ্যক। বাংলাশে চাইলেই সহজেই রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে পারবে না কিন্তু বিশেষ কিছু পক্ষেপের মাধ্যমে সহজেই প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স প্রবাহ) বৃদ্ধি করতে পারবে। যেহেতু বাংলােেশর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো ওয়েজার্নাস রেমিট্যান্স, যা প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ থেকে আসে এবং যেহেতু বাংলাদেশ চাইলেই এই প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করতে পারে, সেহেতু বাংলােেশর এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে প্রবাসী আয় বৃ্দ্িধর দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ওেয়া উচিত। অন্যেিক চাইলেই বাংলাশে সরকার প্রয়োজন মতো বাংলাদেশি মুদ্রা ছাপাতে পারে কিন্তু চাইলেই বৈদেশিক মুদ্রা ছাপানো সম্ভব নয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী আয় বৃদ্ধিই স্বল্পমেয়াে উত্তম কৌশল।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৭ জন বাংলািেশ কর্মসংস্থানের জন্য বিেেশ গেছেন। তবে, এই সংখ্যায় ফিরে আসা ব্যক্তিরে তথ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। ধরা যাক ১ কোটি বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য বিেেশ কর্মরত আছেন। যদি প্রত্যেক প্রবাসী রেমিটার প্রতিমাসে ন্যূনতম ৫০০ মার্কিন ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে প্রেরণ করেন, সেক্ষেত্রে দেশের বার্ষিক মোট প্রবাসী আয় হওয়ার কথা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ এই আয় আসছে মাত্র ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২৩-২০২৪ সালে বাংলােেশর রেমিটেন্স আয়ের পরিমাণ) যা সম্ভাব্য মোট আয়ের (৬০ বিলিয়ন ডলার) মাত্র ৪০%। এখান থেকে সহজে অনুমান করা যায় যে, বাকি ৬০% রেমিটেন্স দেশে প্রেরিত হচ্ছে হুন্ডি বা অন্যান্য অবৈধ মাধ্যমে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার রেমিটেন্সের ওপর ২.৫% ইনসেন্টিভ প্রদান করছে যা রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহায়তা করার কথা, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় নাই। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা:
আমরা যদি প্রবাসী রেমিটেন্স আয় ৪০% থেকে বৃদ্ধি করে ৭০% বা ৮০% এ উন্নীত করতে চাই, সেক্ষেত্রে প্রবাসী রেমিটেন্সের রেট (টাকা-ডলার) নির্ধারণের ক্ষেত্রে রেমিটেন্স প্রেরণকারী শে ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন রেট নির্ধারণ করতে হবে যা ঐ দেশে বিদ্যমান হুন্ডি রেটের চেয়ে বেশি হবে। উদাহরণ স্বরূপ মালয়েশিয়া মার্কেটে টাকা- ডলার রেট নির্ধারণ করতে হবে মালয়েশিয়া মার্কেটের হুন্ডি রেট বিবেচনা করে। একইভাবে বাংলােেশ সর্বাধিক রেমিটেন্স প্রেরণকারী অন্যান্য দেশগুলিতে (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহারাইন, ইটালি, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি) ঐ দেশের হুন্ডি রেট বিবেচনা করে উক্ত দেশের জন্য টাকা-ডলার রেট প্রদান করা যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলের রেট হুন্ডির রেটের চেয়ে বেশি হয়। র্আৎ বিভিন্ন মার্কেটের টাকা-ডলার রেট ভিন্ন ভিন্ন হবে। শেভিত্তিক এই টাকা-ডলার রেট প্রতিদিন মনিটার করতে হবে এবং প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করতে হবে অর্থাৎ বাড়াতে বা কমাতে হবে। হুন্ডি রেট সংগ্রহের জন্য স্ব স্ব দেশে অবস্থিত বাংলাশে দূতাবাস অথবা বাংলাদেশি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোনো রেমিটেন্স হাউজ থাকলে তাদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন দেশের রেট ভিন্ন ভিন্ন হবে, সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলিকে শেভিত্তিক রেমিটেন্স আহরণের রিপোর্ট প্রণয়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও, এগ্রিগেটরগুলি থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স যাতে বাংলােেশর ব্যাংকগুলি দেশ ভিত্তিক পৃক করতে পারে এবং তদনুযায়ী দেশ ভিত্তিক রেট এগ্রিগেটর থেকে প্রাপ্ত ডলারে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে প্রতিটি ব্যাংক তাদের রেমিটেন্স ক্রয়ের জন্য ওয়েটেড এভারেজ রেট নিরূপণ করতে পারবে যা ব্যাংকগুলিকে তাদের আমদানি/ রপ্তানির ডলারের দাম নির্ধারণে সহায়তা করবে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা:
হুন্ডি রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে আজীবন উচ্চমূল্যে ডলার ক্রয় করা অসম্ভব, কারণ এটি আভ্যন্তরীণ বাজারে একটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। উচ্চ মূল্যে ডলার ক্রয় সর্বোচ্চ ৩-৫ বছর পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে প্রবাসিগণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। অন্যদিকে প্রবাসীরে কল্যাণে দেশে এবং প্রবাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ চালু করতে হবে যা তারেকে ৩-৫ বছর পর রেট কম থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করবে। বিদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক তৈরি, কম খরচে তাদেরকে বিেেশ প্রেরণ এবং বিভিন্ন দেশে বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সত্যিকার অর্থে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা সকল প্রবাসীকে যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারি এবং সকল প্রবাসীই যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা প্রেরণ শুরু করেন, তাহলে দেশের চিত্র আমূল পরিবর্তন হবে। প্রথমত, আমদানি ব্যয় মেটাতে আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ থাকবে। দ্বিতীয়ত, ট্রেড গ্যাপ না থাকলে ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে, ফলে টাকার মূল্যও বাড়বে, এবং তৃতীয়ত, শে থেকে অবৈধ অর্থ পাচার কমবে যা প্রত্যক্ষভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
লেখক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
সিবিএল মানি ট্রান্সফার এসডিএন বিএইচডি মালয়েশিয়া।
Source: প্রবাস বার্তা