বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিলো, সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো ভারত

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের দলগত সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। কমিশনের দাবি, এ ঘটনার মূল সমন্বয়কারী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস এবং পুরো ঘটনার পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “গ্রিন সিগন্যাল” ছিলো। তদন্তে ভারতের সম্পৃক্ততাও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ১১ মাসের তদন্ত শেষে কমিশন তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা ও ক্ষমতা ধরে রাখতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, “ঘটনায় সম্পৃক্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মেয়র ও পলাতক শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।” এছাড়াও শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরের নামও উল্লেখ করা হয়।
কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমাদানের সময় বলেন, কমিশন হত্যাকাণ্ডের বাহ্যিক ও প্রকৃত কারণ বের করেছে, এবং এ ঘটনার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ জড়িতদের রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে। কমিশনপ্রধান জানান, “এটা এক দিনে হয়নি, দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছে।” বিভিন্ন স্থানে মিটিং ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ঘটনাটি সংগঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এ ঘটনার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “গ্রিন সিগন্যাল” ছিল এবং দায় নির্ধারণে তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে সেনাপ্রধান পর্যন্ত দায়িত্ব রয়েছে। ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় প্রায় ১২২১ জন ভারতীয় বাংলাদেশে এসেছিলো, যাদের মধ্যে ৬৫ জনের কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, এ বিষয়ে ভারতের কাছে তথ্য জানতে চাওয়ার জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলো এবং বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা থেকে তারা লাভবান হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, কমিশন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ও ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন অন্ধকারে ছিলো। আপনারা সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে।” তিনি আরও বলেন, এ প্রতিবেদনে শিক্ষণীয় বহু বিষয় রয়েছে এবং এটি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে।

