যদি ঈমানকে হেফাজত করতে চাও, তাহলে জামায়াত থেকে দূরে থাকো: হেফাজতের আমির

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও জামিয়া বাবুনগর মাদরাসার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর ফেতনা কাদিয়ানির ফেতনার চেয়েও ভয়াবহ। কাদিয়ানিরা ঈমানের যত ক্ষতি করতে পারেনি, জামায়াতে ইসলামী তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসার ১০৩তম বার্ষিক মাহফিলের সমাপনী দিনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাবুনগরী বলেন, ঈমান-আকিদা রক্ষায় বাংলাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামকে নির্মূলের চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশে এত বড় জাহেল থাকতে পারে না, যারা হযরত ওমর (রা.) সহ সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে কটুক্তি করে।
তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী নাম দিয়েছে ইসলামি সংগঠন হিসেবে, কিন্তু তারা ঈমানের বড় ডাকাত। আমাদের আকাবিররাও বলেছেন জামায়াতে ইসলামের ইসলাম আর আমাদের ইসলাম এক নয়। আমাদের ইসলাম হচ্ছে মদীনার ইসলাম, আর তাদের ইসলাম মওদুদীবাদীর ইসলাম। যদি ঈমানকে হেফাজত করতে চাও, তাহলে জামায়াতে ইসলাম থেকে দূরে থাকো। যারা জামায়াতে ইসলামীতে আছে, তাদের ঈমান আছে কি না – তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বাবুনগরী বলেন, ঈমান ও আকিদার মূল বিষয় হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সেই আসল পথ থেকে সরে গিয়ে নতুন একটি মওদুদীবাদী ইসলাম তৈরি করেছে। তারা মদীনার ইসলাম নয়, মওদুদীর বানানো ইসলাম প্রচার করছে।
তিনি বলেন, যারা বলে সাহাবীদের ভুল ছিল, তারা আসলে নিজেদের আকিদায় ভুলে আছে। যারা হযরত ওমর (রা.), হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উসমান (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কটুক্তি করে, তারা কখনো মুসলমান থাকতে পারে না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, মওদুদীবাদীরা কোরআন-সুন্নাহর চেতনা বিকৃত করছে। তারা ইসলামী রাজনীতি নয়, রাজনৈতিক ইসলাম বানাতে চায়। এরা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এই ফেতনা থেকে জাতিকে রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। তিনি আরও আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা ঈমানকে হেফাজত করতে চাও, তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে দূরে থাকো। কারণ, তাদের ভেতরে ইসলাম নয়- রাজনৈতিক স্বার্থ, ক্ষমতা ও পদলোভ বাসা বেঁধেছে।
ফটিকছড়ি থেকে সংবাদদাতা জানান, মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিশ বাংলাদেশের আমির আল্লামা মামুনুল হক। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ, কওমী ও আলিয়া মাদরাসা থেকে একযোগে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাগরণ শুরু হয়েছে। এ জাগরণকে কেউ রুখতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর কাছে এই জাতি হাজার বছর ঋণী হয়ে থাকবে। তিনি আল্লাহু আকবারের পতাকা উঁচিয়ে আমৃত্যু সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সকল বাধা ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ইসলাম ও দ্বীনের খেদমতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। যা ইতিহাসে এক সাহসী পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলামী বক্তা শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, আজকের তরুণ সমাজের এক বিশাল অংশ ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসছে কিংবা আসার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার অপশক্তি নানা ছলে তাদের ঈমান কেড়ে নিচ্ছে। শিক্ষার নামে, উন্নয়নের নামে, আধুনিকতার নামে মুসলমানদেরকে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদের ওলামায়ে কেরামদের এমন যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও সাহস দান করেন-যাতে তাঁরা সমাজকে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে পরিবর্তন করতে পারেন। এই ভূমিকে আল্লাহ তাআলা ঈমান, কোরআন ও সুন্নাহর জন্য কবুল করুন।
এছাড়াও বক্তারা বলেন, বাবুনগর মাদরাসা কোনো সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়; এটি এক বিশাল জ্ঞানের স্মৃতিস্তম্ভ। এখান থেকে যুগে যুগে ঈমান ও আমলের বাণী ছড়িয়ে পড়ছে, যা বাংলাদেশের ইসলামি চিন্তা-চেতনার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
মাহফিল শেষে দেশের কল্যাণ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়।
এ সময় মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরোয়ার আলমগীর, বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-উলামা, সাংবাদিক ও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
ফটিকছড়ির বিশাল এ সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মাহফিল প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লামা বাবুনগরীর বক্তব্যে সমস্বরে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দেন এবং ইসলাম বিরোধী সকল ফেতনা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন।
মাহফিলের দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনে আরো বয়ান করেন আল্লামা সায়্যিদ মওদুদ মাদানী (দেওবন্দ, ভারত), আল্লামা আওরঙ্গজেব ফারুকী (করাচী, পাকিস্তান), মুফতি মাহমুদ হাসান (চট্টগ্রাম), মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি (ঢাকা), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী (ঢাকা)।
প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু
Source: bartabazar.com

