Bd বাংলাদেশ

এনসিপি–জামাত জোটের পর যে প্রতিক্রিয়াগুলো আমরা সেকুলারদের কাছ থেকে পাচ্ছি তা খুব ইন্টারেষ্টিং

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:

এনসিপি–জামাত জোটের পর যে প্রতিক্রিয়াগুলো আমরা সেকুলারদের কাছ থেকে পাচ্ছি তা খুব ইন্টারেষ্টিং







Image description

যেমন, সাংবাদিক তাসনিম খলিল লিখেছেনঃ “জামাত যখন যার ঘাড়েই বসেছে তাকেই ছারখার করে দিয়েছে: বিএনপি, ইউনূস সরকার, এনসিপি।“ প্রায় একই রকম রেসপন্স আমরা আরো অসংখ্য সেকুলার মানুষদের কাছ থেকে পাচ্ছি।
তাদের এই প্রতিক্রিয়া কেবল “রাজনৈতিক মতভেদ” থেকে উৎসারিত নয়। বরং এখানে কাজ করছে আরও গভীর, আরও পুরনো একটি মানসিক কাঠামো—যেটা বোঝা না গেলে পুরো ঘটনাটাই ভুলভাবে ব্যাখ্যা হবে।
ঘটনাটা খুব সরলভাবে শুরু করা যাক। এনসিপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচনী বাস্তবতায় হিসাব–নিকাশ করে জামাতের সঙ্গে জোট করেছে। এই সিদ্ধান্তে জামাত এনসিপিকে বাধ্য করেছে—এমন কোনো ব্যাপার নেই। বরং এনসিপির ভেতরের কিছু নেতা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়ে দল ছেড়েছেন। এটা রাজনীতিতে অস্বাভাবিক নয়। নতুন দলে মতভেদ হয়, বিভাজন হয়, ভাঙন হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ভাঙনের দায় কার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে?
 
দেখা যাচ্ছে, প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়টা গিয়ে পড়ছে জামাতের ওপর। এখানে লক্ষ্য করুন—এটা কোনো বিশ্লেষণ নয়, এটা একটি রিফ্লেক্স, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীর থেকে উৎসারিত হয়। এখানে কোনো প্রমাণ, কোনো কংক্রিট রাজনৈতিক ব্যাখ্যার দরকার হচ্ছে না। তার দেহ,মন স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলে উঠছেঃ “জামাত আছে মানেই দোষ তার।”
 
এই জায়গাটা বোঝার জন্য নৃতত্ত্ববিদ Schirin Amir-Moazami-এর কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপে হিজাব ও নিকাব বিতর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন—সেকুলারিজম শুধু একটি আইনগত নীতি নয়, বরং এটি এম্বডিড ( embodied) এবং প্রিলজিকাল( prelogical): অর্থাৎ এটা যুক্তি-তর্কের আগেই মানুষের আবেগ, শরীর, ভাষা ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বসে থাকে। এবং গণপরিসরে ইসলামি চিহ্ন দেখলেই এক ধরনের অস্বস্তি, ভয় ও বিরাগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। এই প্রতিক্রিয়া যুক্তির আগেই তৈরি হয়—তারপর যুক্তি বানানো হয় সেটাকে বৈধ করার জন্য
 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জামাত ঠিক সেই “হিজাব” বা “নিকাব”-এর মতো একটি চিহ্ন। জামাত মানেই সেকুলার কল্পনায় একটি দূষণকারী উপস্থিতি। ফলে এনসিপির ভাঙনকে ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, নেতৃত্ব সংকট বা কৌশলগত মতভেদের মাধ্যমে। দায়টা সহজে জামাতের ওপর চাপিয়ে দিলেই নৈতিক স্বস্তি পাওয়া যায়।
 
এখানে Bobby Sayyid-এর “fundamental fear” ধারণাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি দেখিয়েছেন—আধুনিক সেকুলার ও ইউরোসেন্ট্রিক চিন্তার গভীরে একটি মৌলিক ভয় কাজ করে: মুসলিম রাজনৈতিক সাবজেক্টিভিটি দৃশ্যমান হলে বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায়। এই ভয় কোনো নির্দিষ্ট কাজের কারণে নয়; এটি ইসলামকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প নৈতিক ও রাজনৈতিক কল্পনা হিসেবে দেখার আতঙ্ক থেকে জন্ম নেয়
এই কারণেই সেকুলাররা নিজেদেরকে “র্যাশনাল”বা যুক্তিবান ভাবলেও বাস্তবে তারা প্রতিক্রিয়া জানায় তাদের রক্তে-মাংসে বসে থাকা এক ধরনের আতঙ্ক থেকে। ইসলামি কোনো দল সামনে এলেই বিশ্লেষণ থেমে যায়, শুরু হয় স্কেপগোটিং। জামাত এখানে একটি সুবিধাজনক বলি—যাকে দোষ দিলে আর কিছু ব্যাখ্যা করতে হয় না।
 
এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, এতে এনসিপির নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্সি অস্বীকার করা হয়। তারা যেন নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না—জামাত এলেই সব ভেঙে পড়ে। এটি একদিকে এনসিপিকে ছোট করে, অন্যদিকে রাজনীতিকে শিশুসুলভ নৈতিক আতঙ্কে নামিয়ে আনে।
 
এটা জামাতকে নির্দোষ প্রমাণ করার লেখা নয়। এটা সেকুলার ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দেখানোর চেষ্টা। সেকুলারদের সব প্রতিক্রিয়া যুক্তি থেকে আসে না। অনেক সময় সেগুলো আসে শরীরে বসে থাকা সেই মৌলিক ভয় থেকে, যেটা সেকুলারদের দেহে ইতিমধ্যে বাসা বেধে বসে আছে। এবং ইসলামি চিহ্নের হাজিরায় তারা নিজেদের অজান্তেই রেসপন্স করে।
ঠিক যেমন হিন্দু ব্রাক্ষনরা অচ্ছুৎ দলিতদের সংস্পর্শে নিজেদের অজান্তেই জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকার করে ওঠে।


author

Ari budin

#

Programmer, Father, Husband, I design and develop Bootstrap template, founder

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু

Source: bdtoday.net

Leave a Reply

Back to top button