Bd বাংলাদেশ

নাহিদ ইসলাম হতে পারেন এনসিপি-জামায়াত জোটের মুখপাত্র, শীঘ্রই আসছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:

নির্বাচনের সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। শেষ সময়ে এসে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠন, আসন সমঝোতাসহ নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে বহুল আলোচিত আসন সমঝোতার বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাতেও দুই দলের শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

এনসিপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জামায়াত-এনসিপির আসন সমঝোতা এখন কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায়। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা আসবে। আজ শনিবার বা আগামীকাল রোববার এ ঘোষণা হতে পারে বলেও তারা জানিয়েছেন। এনসিপির নেতাদের ভাষ্য, এটি একটি নির্বাচনী কৌশল এবং সংস্কার প্রশ্নে জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঐকমত্য হয়েছে। নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য ও শীর্ষ নেতৃত্ব সম্মতির ভিত্তিতে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। দলের একাংশ, নারী নেত্রীদের কয়েকজনসহ, শুরুতে বিরোধিতা করলেও পরে দলের স্বার্থে অনেকেই এতে সম্মতি দিয়েছেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, "আগামী রবি ও সোমবারের মধ্যে এটির (আসন সমঝোতা) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। জামায়াত–এনসিপির আসন সমঝোতা হয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তা-ও দু–এক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিএনপি বাদে জুলাইয়ের শক্তিগুলো যদি এক হয়, বিশেষ করে এনসিপি, জামায়াতসহ ৮ দলীয় জোট গড়ে ওঠে, তাহলে ভালো হবে। আশা করি, আমরা সরকার গঠন করব।" এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, সমঝোতার অংশ হিসেবে দলটি অন্তত ৫০টি আসন চেয়েছে। যদিও ৩০টি আসন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। কারা কোন আসনে থাকবেন, তা নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই এ সমঝোতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানান তারা। এনসিপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, "সংস্কার, দলের বৃহত্তর স্বার্থ ও নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবেই এই আসন সমঝোতা হচ্ছে। নির্বাচন ও নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে দেশ সংস্কারই মূল লক্ষ্য।"  তিনি জানান, সমঝোতা রাজনৈতিক জোটে রূপ নিলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এর মুখপাত্র হবেন।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা–১০ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কোন দল বা জোট থেকে তিনি নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানাননি। এনসিপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি দলটিতে যোগ দিতে পারেন এবং খসড়া তালিকায় তার নাম রয়েছে। তবে আসিফ মাহমুদ বলেন, কোনো দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা–১১, সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর–৪, হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা–৪, সারজিস আলম পঞ্চগড়–১, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা–১৮, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা–১০, আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী–৬, আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা–১৬, তাসনিম জারা ঢাকা–৯, সারোয়ার তুষার নরসিংদী–২, আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রাম–২, আব্দুল্লাহ আলামিন নারায়ণগঞ্জ–৪ এবং সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জ–৬ আসনে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে পারেন। অন্য আসনগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত মঙ্গলবার থেকে জামায়াত–এনসিপি সমঝোতা নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়। ওইদিন দুই দফা বৈঠকে সংস্কার, বিচারসহ মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে তারা একমত হন। এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনের নিশ্চয়তা চাইলেও জামায়াত ৩০টি আসনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। এসব আসনে এনসিপির জোটসঙ্গী আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থাকতে পারে, তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের থাকার সম্ভাবনা কম। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, "বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলমান। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।" জামায়াতের এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, দলটি দেড়শ থেকে দুইশ আসনে দলীয় প্রার্থী দেবে এবং জোট চূড়ান্ত হলে মিত্রদের জন্য বাকি আসন ছাড়বে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান বলেন, "এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব চূড়ান্ত হবে।"

এর আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, দলটি এককভাবে নির্বাচন করবে এবং প্রথম পর্বে ১২৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে তিনি বলেন, "জুলাই সনদ ও সংস্কারের দাবিতে ঐকমত্য হলে জোটের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।" তবে আসন সমঝোতা হলেও এনসিপি নিজস্ব প্রতীক শাপলা কলিতেই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন।

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু

Source: thedeltalens.com

Leave a Reply

Back to top button