বিদায় নিচ্ছেন জাহিদ, শিবিরের নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে সাদ্দাম-সিবগাতুল্লাহ

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:
বিদায় নিতে চান সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। নতুন বছরে কে ধরছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাল? দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৫ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংগঠনের ভেতরে-বাইরে এখন সেই কৌতূহল। কাল ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিবিরের সম্মেলন। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলন থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রমতে, ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম আর দলে থাকতে চান না। সে হিসেবে নতুন বছর থেকেই দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে চান তিনি। গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী, সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার সদস্যের সরাসরি গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত সভাপতি একজনকে সেক্রেটারি মনোনীত করবেন। এবারের সম্মেলনে সভাপতি হওয়ার দৌঁড়ে বেশ কয়েকজন নেতার নাম জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।
ছাত্রশিবিবের কমিটির মেয়াদকাল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ৪৯ কমিটির কোনোটি এক বছরের বেশি মেয়াদে ছিল না। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করেছেন।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, আলোচনায় থাকা নেতাদের মধ্যেই সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে যিনি সভাপতি নির্বাচিত হবেন, ব্যতিক্রম না হলে তিনি আলোচনায় থাকা বাকি নেতাদের মধ্য থেকেই একজনকে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করবেন। তাদের মতে, ২০২৫ সালের এ সম্মেলন ছাত্রশিবিরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় ভোটারদের একটি বড় অংশ তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে মেধাবী ও কৌশলী নেতৃত্বের দরকার। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির নতুন ধারায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করাও নতুন কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে।
১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রায় ৫০ বছরে এ পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনটির প্রায় একই সংখ্যক কমিটি গঠিত হয়েছে। শিবিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বমোট ৩৩জন এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ একাধিক মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও কেউ কেউ একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এ ৩৩জন সভাপতির মধ্যে ৩০ জন তার পূর্ববর্তী সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
ছাত্রশিবিরের সংবিধানের ১৩ ও ১৪ নম্বর ধারায় সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। যদি কোনো কারণবশত কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ স্থায়ীভাবে শূন্য হয়, তাহলে কার্যকরী পরিষদ পরিষদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করে খুব শিগগির সম্ভব সদস্যদের ভোটে সেশনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যদি কেন্দ্রীয় সভাপতি সাময়িকভাবে ছুটি গ্রহণে বাধ্য হন, তাহলে তিনি কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিষদের মধ্যে থেকে তিন মাসের জন্য অস্থায়ী সভাপতি নিযুক্ত করতে পারবেন।
মীর কাশেম আলী ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না। সেক্রেটারি জেনারেল না হয়ে সরাসরি সভাপতির দায়িত্ব পালন করা বাকি দুইজন হলেন মুহম্মদ কামারুজ্জামান এবং মুহাম্মদ শাহজাহান।
সর্বশেষ পাঁচ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন আইউবী, হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, রাজিবুর রহমান পলাশ, মঞ্জুরুল ইসলাম এবং জাহিদুল ইসলামও আগে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছাত্রশিবিবের কমিটির মেয়াদকাল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ৪৯ কমিটির কোনোটি এক বছরের বেশি মেয়াদে ছিল না। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করেছেন।
স্বল্প বিরতির পর দুপুর ২টা থেকে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন শুরু হবে। সমাপনী অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন, সমাপনী বক্তব্য ও দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে বার্ষিক সদস্য সম্মেলন–২০২৫ এর কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকে সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনালের মনোনয়নের পর সারাদেশেও একই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। তবে শিবিরের অনেক সভাপতি পরপর দুইবার নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে।
বার্তাবাজার/এমএইচ
প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু
Source: bartabazar.com

