Bd বাংলাদেশ

এখন থেকে জাপানে ৭ হাজারের বেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট:

দীর্ঘ আলোচনার পর জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (ইপিএ) খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। আগামী মাসে দেশটির সঙ্গে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর হবে। কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এটি প্রথম ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি। চুক্তির ফলে জাপানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৩৭৯টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশে ১ হাজার ৩৯টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ–জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে চুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই চুক্তির মাধ্যমে জাপানের জন্য বাংলাদেশের ৯৭টি উপখাত উন্মুক্ত করা হবে। অপরদিকে, জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২০টি উপখাতে চারটি মোডে সেবা খাত উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, "নিবিড় আলোচনার মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে ইপিএর চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আগামী মাসে ইপিএ স্বাক্ষর হবে।" তিনি বলেন, "বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এটি প্রথম অর্থনৈতিক চুক্তি। এর ফলে উভয় দেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে।"

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চুক্তি কার্যকর হলে স্বাক্ষরের দিন থেকেই বাংলাদেশ ৭ হাজার ৩৭৯টি পণ্যে জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। একইভাবে জাপান বাংলাদেশের বাজারে ১ হাজার ৩৯টি পণ্যে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, "এ ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি আমরা আগে কখনো করিনি। তাই কীভাবে এগোতে হবে, তা আমাদের সেভাবে জানা ছিল না। সরকারের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা এটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো চুক্তি।"

এদিকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাপানের বিনিয়োগের তুলনায় কম। তিনি বলেন, আগে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঠামো না থাকায় প্রতিবন্ধকতা ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে লজিস্টিক, ইলেকট্রনিক্স, আইটি ও অটোমোবাইল খাতে জাপানের বড় বিনিয়োগ আসবে। এর ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি স্থানান্তর ত্বরান্বিত হবে। তিনি আরও বলেন, "ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা হয়। ভিয়েতনামের ৩০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি আছে, আর আমরা এখন শুরু করছি। এই যাত্রার ফলে ভবিষ্যতে আরও অর্থনৈতিক চুক্তি করা সম্ভব হবে এবং এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে।"

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। উভয় দেশের উপদেষ্টা পরিষদ বা ক্যাবিনেটের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে আগামী মাসে চুক্তিতে স্বাক্ষর হবে। অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ইপিএ মূলত দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য এলাকা গঠনের একটি কাঠামো, যার মাধ্যমে শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য বাড়ানো হয়।

প্রবাস কন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট/আ/মু

Source: thedeltalens.com

Leave a Reply

Back to top button